বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * ধেয়ে আসছে ১২ শৈত্যপ্রবাহ, হতে পারে শিলাবৃষ্টিও!   * হাইকমিশনে হামলার নিন্দা জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো : আসিফ নজরুল   * ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে ভারতীয় রুপি   * উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ   * দু-এক দিনের মধ্যে সুখবর আসছে : জামায়াতের আমির   * দেশকে নতুন করে অস্থির করার চেষ্টা চলছে : প্রধান উপদেষ্টা   * খালেদা জিয়ার বাসায় চীনা রাষ্ট্রদূত, দিলেন ‘বিশেষ উপহার’   * দুই মাসের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায় ছাত্রসংগঠনগুলো   * অর্থ পাচার করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ফতুর করা হয়েছে : নিউইয়র্ক টাইমস   * ভারতের পতাকা মাড়ানোর ভাইরাল ছবিটি ‘এআই’ দিয়ে তৈরি : রিউমর স্ক্যানার  

   মতামত
ছাত্র রাজনীতির সমৃদ্ধ ইতিহাস ও নিজ দৃষ্টিভঙ্গি
  Date : 03-04-2024

মোহাম্মদ ইলিয়াছ

কবি হেলাল হাফিজ বলেছেন, ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/মিছিলের সব হাত/কণ্ঠ/পা এক নয়।/সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে,/কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার।/কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার/শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে/অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে/অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে,/কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয় প্রলোভনে/কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয়।/যদি কেউ ভালোবেসে খুনী হতে চান/তাই হয়ে যান/উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায়।/এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’

তরুণ-যুবাদেরই অশুভ চক্রান্ত ও দেশবিরোধী সকল ষড়যন্ত্রের হাত থেকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাকে রক্ষা করতে হবে। কবির ভাষায় বলতে চাইÑ ‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?’ স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে জাগ্রত হয়ে দেশরত্ন জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।


বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ছাত্ররাজনীতির ইতিহাস এবং ঐতিহ্য এতোটাই উজ্জ্বল যে এখনো আমরা সগৌরবে স্মরণ করি। জাতীয় রাজনীতি কিংবা ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির অন্যতম প্রবেশদ্বার হিসেবে ছাত্ররাজনীতিকে মনে করা হয়।

বাংলাদেশের যেকোনো পর্যায়ের রাজনৈতিক আদর্শের কথা যদি বলতে হয় তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম আসবে সর্বাগ্রে। কারণ রাজনীতি করার জন্য যে দর্শন প্রয়োজন, যে আদর্শ প্রয়োজন, যে নৈতিকতাবোধ কিংবা মূল্যবোধ, মানবিকতাবোধ, সহমর্মিতাবোধ, কৃতজ্ঞতাবোধ, সহনশীলতা, প্রজ্ঞা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা, দেশপ্রেম থাকা প্রয়োজন তার একটি সমষ্টিগত আচরণ ছিল জাতির পিতার মধ্যে। এইসব গুণাবলি নিয়ে ছাত্ররাজনীতি এবং জাতীয় রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। সেই সঙ্গে সময়ের কালক্রমে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এই দেশের সাত কোটি মানুষের নির্ভরতার প্রতীক।

বাংলায় একটি প্রবাদ বাক্য আছে ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’। দেশে যেকোনো ঘটনা ঘটলে দায় এসে পড়ে ছাত্র রাজনীতির উপর। বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের বড় অংশ দখল করে আছে ছাত্র রাজনীতি। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফার আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১’র মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারের পতনের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতির নতুন অভিযাত্রা শুরু হয়েছে।


১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা এবং তার পরিবারকে হত্যা করার মাধ্যমে একটি দেশ যেমন তার নেতা হারিয়েছিল ঠিক একই ভাবে ছাত্র নেতারা হারিয়েছিলো তাদের অভিভাবককে। শুধু তাই নয় পরবর্তীতে যাদের নেতৃত্বে ছাত্র নেতা এবং এই দেশ ঘুরে দাঁড়াবার সুযোগ ছিলো ঘাতকেরা জাতীয় চার নেতাকে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে বন্দী করে হত্যা করে সদ্য স্বাধীন দেশকে আরেকবার অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। যা করেছিল পাকিস্থানের দালাল, রাজাকার, আলবদর, আলশামস ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে। তারা জানত যে এই দেশের স্বাধীনতা ঠেকানো সম্ভব নয়। তাই সেই রাতে পরিকল্পিতভাবে সকল বুদ্ধিজীবীদের নির্বিচারে ধরে নিয়ে হত্যা করে। বাঙালি জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। ঠিক একই ভাবে ১৯৭৫ সালে আরেকবার দেশীয় দুষ্কৃতিকারিরা এই হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠে। এবং তারা সফল হয়। যার দরুন ছাত্র রাজনীতিতে অপূরণীয় নেতৃত্বের সঙ্কট তৈরী হয়।

শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ কিংবা নিয়ন্ত্রিত ছাত্ররাজনীতির চর্চা করা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। আর নৈতিকতা ও মূল্যবোধ চর্চার আঁতুড়ঘর হলো পরিবার ও প্রাথমিক শিক্ষা। সেখানে সুনজর দিয়ে জাতিগতভাবে আমরা যে সদাশয়, সদাচার এবং মানবিক সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। আধুনিকতা মানে গোঁড়ামি, ভণ্ডামি, নিজের ঐতিহ্যকে বিলিয়ে দেওয়া তা নয়। আধুনিকতা হলো মানসিক উদারতা, সকল ভালো কাজের সঠিক মূল্যায়ন, চিন্তা ও মননে প্রগতিশীল আচরণ, অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করা, অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া। এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলেই কেবল স্বাধীনতা মূল্যায়িত হবে। আর এগুলো অর্জন এবং সঠিক বাস্তবায়ন প্রতিফলিত হয় ছাত্র সমাজের মাধ্যমে, তাদের আচার-আচরণ, বিচরণে, কর্মে ও ব্যবহারে। এই গুণাবলী যতটা না সাধারণ জনতা চর্চা করবে তার চেয়ে বেশি করবে ছাত্ররা। একজন মানুষের জন্য ছাত্রজীবন মানেই একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সময়। সে সময় একজন ছাত্র নিজেকে নিজের ভবিষ্যতের উপযোগী একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট থাকেন। যেমন ধরা যাক একজন কৃষক কখন ভালো ফলন আশা করে? যখন একজন কৃষক ভালো বীজ বপন করেন ঠিক তখনই তিনি ভালো ফসল আশা করেন।


ঠিক একইভাবে আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীরা নিজেদেরকে ভবিষ্যতের জন্য একজন ভালো অভিজ্ঞ রাষ্ট্র পরিচালক করে তৈরী করতে পারে। যেমন একজন দক্ষ বা অভিজ্ঞ লোক কোনো বিষয়ের ওপরে একদিনেই দক্ষ বা অভিজ্ঞ হতে পারেন না। ঠিক তেমনি একজন ছাত্র রাজনীতি মাঠে আসা মাত্রই অভিজ্ঞ হতে পারেন না।

একজন ছাত্রছাত্রীকে ভালো রাজনীতিবিদ হতে হলে তার থাকতে হবে সৎ সাহস বা সততা। তবেই সে ছাত্র থেকে রাজনৈতিক জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে।

এদেশের একজন মেধাবী ছাত্র আগামী দিনের সচেতন এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক হতে পারেন। সাধারণ মানুষের যেমন সব ক্ষেত্রে ইচ্ছাশক্তি এক নয় তেমন ছাত্রছাত্রীদেরও এক ইচ্ছাশক্তি হয় না। একেক জন ছাত্রছাত্রীর একেক রকমের ইচ্ছা থাকতে পারে। বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে কর্মজীবনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। তবে যারা দেশের সমৃদ্ধির জন্য মানুষের কল্যাণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে চান তাদেরকে ছাত্র রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া উচিৎ।

সম্মুখে এগিয়ে চলে প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতি। ঐতিহাসিক পরিক্রমায়, বর্তমানের বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস গর্বের ইতিহাস। বাঙালি জাতির ভাগ্যের আকাশে যখনি কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা দিয়েছে, তখনি এগিয়ে এসেছে ছাত্ররা। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ২০০৭-এর গণতন্ত্রের মুক্তি আন্দোলনসহ বাঙালি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার সকল আন্দোলনই পরিচালিত হয়েছে ছাত্রদের অগ্রণী ভূমিকায়। যতদিন ছাত্রদের নেতৃত্বের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অটুট থাকবে, ভুলপথে পরিচালিত হবে না ছাত্র রাজনীতি এবং ততদিন নিরাপদ থাকবে বাংলাদেশ।

লেখক : উপ-পরিচালক (অর্থ ও বাজেট), বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়।



  
  সর্বশেষ
ধেয়ে আসছে ১২ শৈত্যপ্রবাহ, হতে পারে শিলাবৃষ্টিও!
হাইকমিশনে হামলার নিন্দা জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো : আসিফ নজরুল
ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে ভারতীয় রুপি
উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ

প্রকাশক ও সম্পাদক: শাকিলা জাহান।
ঠিকানা : ৫৬-৫৭, শরীফ ম্যানশন, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৩০১১০৪০৭০ ই-মেইল: gmbangla23@gmail.com জি.এম বাংলার লিঃ (একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।)