চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পথে-প্রান্তরে, রাস্তার পাশে বনজুঁই সুবাস ছড়াচ্ছে। ফুলগুলো সহজেই নজর কেড়ে নিচ্ছে স্থানীয়দের। ফুল দিনে ফোটে এবং রাতে সৌরভ ছড়ায়। এটি বনজ ফুল হলেও সৌন্দর্যের কমতি নেই। দেখে মনেই হবে না এটি অবহেলিত কোনো ফুল। অনেকের কাছে ‘বনজুঁই’ ভাটফুল, ভাটিফুল, ঘেটুফুল বা ঘণ্টাকর্ণ নামেও পরিচিত। দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো মিরসরাইয়ের আনাচে কানাচে সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে নজর কাড়ছে ফুলটি।
জানা যায়, বনজুঁই’র বৈজ্ঞানিক নাম ক্লেরোডেনড্রাম ভিসকোসাম। এটি গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। গাছের প্রধান কাণ্ড খাড়া, সাধারণত ২-৪ মিটার লম্বা হয়। পাতা কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। পাতা ৪-৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। ডালের শীর্ষে পুষ্পদণ্ডে ফুল ফোটে। পাপড়ি সাদা, তাতে বেগুনি মিশেল থাকে। বনজুঁই সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়াও নানা গুণে গুণান্বিত। ম্যালেরিয়া, চর্মরোগ ও পোকা-মাকড়ের কামড়ে খুবই উপকারী।
মিরসরাইয়ের ওয়াহেদপুর ও সাহেরখালী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কে ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের কিনারায় ফুটে আছে ‘বনজুঁই’। অযত্ন ও অবহেলায় জন্ম নেওয়া এ ফুল সড়কের পথচারীদের মাঝে সুবাস ছড়াচ্ছে। অবহেলিত বন, জঙ্গল, রাস্তা-ঘাট ও পথের কিনারাসহ গ্রামীণ জনপদে এ ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবেন যে কেউ। বসন্তকালে এ ফুল ফুটতে দেখা যায়।
সাহেরখালী ইউনিয়নের আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘বনজুঁই ফুল গাছকে আমাদের স্থানীয় ভাষায় ‘বাইদ গাছ’ বলে। এ গাছ পোকামাকড় তাড়াতে সহায়ক। যে কোনো বীজের সংরক্ষিত স্থানে এ গাছ রাখলে বীজে পোকার আক্রমণ কম হয়। গ্রামের অনেক কৃষক এ পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করেন।’
উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর গ্রামের সাইফুল্লাহ বলেন, ‘একটা সময় বনজুঁই ফুল অনেক দেখা যেত। ক্ষেত-খামারের কিনারা, বাড়ির পাশে, গ্রামের রাস্তার ধারে, পাহাড়ের পাদদেশে, রেললাইনের ধারে ফোটে এ ফুল। ফুলের সুবাস অনেক মিষ্টি। দেখতেও অনেক সুন্দর।’
অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঋতুরাজ বসন্তে দেখা যায় এ ফুল। এখানে-সেখানে নিজের সুন্দর রূপ ছড়িয়ে থাকে বনজুঁই। ফুলটি বাংলাদেশের আদি ফুল। বিভিন্ন স্থানে এ ফুলের দেখা মেলে। নানা গুণে গুণান্বিত এ উদ্ভিদ।’